Students

  Teachers

  Staffs

 

স্নাতক হলেই মেলে চাকরি





আজকের পত্রিকা
প্রিয় চট্টগ্রাম
সাক্ষাৎকার : ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ
উপাচার্য, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১
দৈনিক সমকাল পত্রিকার হুবহু সাক্ষাৎকারটি নিম্নে তুলে ধরা হলো


চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে সংগ্রহ করা প্রায় ১৫০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ সংরক্ষণ করা হয়েছে সিভাসুর মৎস্য জাদুঘরে। এর মধ্যে রয়েছে- কোরাল, কামিলা, মাইট্টা, সুরমা, চান্দা, তারা, ডেভিল রে, বিশতারা, হাতুড়ি হাঙর, শাপলাপাতা, রেমুরাসহ দুর্লভ প্রজাতির মাছ।-সমকাল

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু)। এটি একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের একমাত্র বিশেষায়িত ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ও বটে। সিভাসু মূলত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাটাগরিভুক্ত। গত বছর অন্য সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে গুচ্ছ প্রশ্নপত্রে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছিল। এবারও একই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনটি অনুষদে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি করা হবে ২৪৫ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে মেডিসিন অনুষদে ভর্তি করা হবে ১০০ জন, ফুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদে ৮০ জন এবং মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদে ৬৫ জন।

বর্তমানে সিভাসুতে তিনটি অনুষদ, ১৮টি বিভাগ, দুটি ইনস্টিটিউট ও দুটি রিসার্চ সেন্টার রয়েছে। হাটহাজারীতে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ চলছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে স্নাতক, এমএস, এমপিএইচ, পিএইচপি ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানের দক্ষ প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞ ও খাদ্যবিজ্ঞানী তৈরি করতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অপরিসীম। দেশের এটিই একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়, যার শতভাগ শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পায়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছেন ১৩৯ জন শিক্ষক, ৭০ জন কর্মকর্তা এবং ২১৮ জন কর্মচারী।

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাটাগরিতে ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করার প্রক্রিয়া চলছে। ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এ জন্য নির্ধারিত ওয়েবসাইটে ঢুকে আবেদন করতে হবে। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দ করতে হবে এবং এরপর ফ্যাকাল্টি পছন্দক্রম উল্লেখ করতে হবে। ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে তিনটি অনুষদ রয়েছে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা ক্রমানুসারে বেছে নিতে পারবেন।

ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরিচালক (জনসংযোগ) খলিলুর রহমান বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিশেষত্ব তুলে ধরতে গিয়ে সমকালকে বলেন, দেশে প্রথম মৎস্য জাদুঘর গড়ে তুলেছে সিভাসু। একইভাবে গড়ে তুলেছে শরীর বৃত্তির জাদুঘর। দেশে সর্বপ্রথম প্রাণীর ব্লাড ব্যাংক তৈরি করে সিভাসু। দেশের প্রথম পেট হাসপাতাল তৈরির কৃতিত্বও এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। প্রথম আউটরিচ ক্যাম্পাসও গড়ে তুলেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। সিভাসুর উদ্যোগে কাপ্তাই লেকে তৈরি করা হয়েছে ভাসমান গবেষণা তৈরি। জাহাজের মাধ্যমে মাছ কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি সংরক্ষণের পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে এই গবেষণার মাধ্যমে। সব মিলিয়ে ভেটেরিনারি খাতকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি এই শিক্ষায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিশেষ আগ্রহ তৈরিতে সক্ষম হয়েছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়।

দক্ষ ও যুগোপযোগী ভেটেরিনারিয়ান গড়ে তুলতে ১৯৯৫-৯৬ সালে চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত করা হয় চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি কলেজ। ১৯৯৬ সালের জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে কলেজটি চালু করা হয়। পরে চট্টগ্রামবাসীর আন্দোলনের মুখে সরকার চট্টগ্রাম সরকারি ভেটেরিনারি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করে। ২০০৬ সালের ৭ আগস্ট এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে এটির যাত্রা শুরু হয়। তখন শুধু ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ নিয়ে যাত্রা শুরু করা বিশেষায়িত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু)। দেশের একমাত্র ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় হলেও এটিকে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবেই গণ্য করা হয় এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়েও অনুষদের ওপর শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

সিভাসুর মৎস্য জাদুঘর

২০১৭ সালে সিভাসু গড়ে তুলে মৎস্য জাদুঘর। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় আড়াই হাজার বর্গফুট জায়গায় এই জাদুঘর গড়ে তোলা হয়। কর্ণফুলী, হালদা, রাঙামাটির কাপ্তাই লেক, সিলেটের হাওর, পাবনার খালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পুকুর, বিল ও নদী থেকে সংগ্রহ করে এখানে রাখা হয়েছে স্বাদু পানির ২০০ প্রজাতির মাছ। এসব মাছের রয়েছে কাজলি, রানি, গুতুম, খলিশা, ঢেলা, রিঠা, মধুপাবদা, ফলি, বাইম, মহাশোলের মতো বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ। এ ছাড়া রাখা হয়েছে- রুই, কাতলা, কালিবাউস, মৃগেল, ইলিশ, ভ্যাদা ইত্যাদি। আর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে সংগ্রহ করা প্রায় ১৫০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- কোরাল, কামিলা, মাইট্টা, সুরমা, চান্দা, বিশতারা, তারা, ডেভিল রে, হাতুড়ি হাঙর, শাপলাপাতা, রেমুরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।

শারীরবৃত্তির জাদুঘর

দেশের প্রথম শারীরবৃত্তির জাদুঘর তৈরি করা হয়েছে সিভাসুতে। ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের হেকেপ প্রকল্পের আওতায় জাদুঘরটি গড়ে তোলা হয়। এখানে রয়েছে ঘোড়া, গরু, হরিণ, উট, হাঁস, ছাগল, ভেড়া, কবুতর, কুমির, সাপ, টিকটিকি, শূকর, উটপাখি এবং বানরের কঙ্কাল। জাদুঘরে রয়েছে ৩০টি স্টাফ প্রাণী, ২০টি প্রাণীর মডেল, ফর্মালডিহাইডে ৫০০টি নমুনা, ২ হাজারটি বিভিন্ন ধরনের হাড়, ৩ হাজার বিভিন্ন ধরনের স্লাইড এবং ৩০ জন বৈজ্ঞানিকের স্থির চিত্র। কিছু শুকনো নরম অঙ্গও জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

কক্সবাজার আউটরিচ ক্যাম্পাস

বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান এবং গবেষণার মাধ্যমে উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য, সামৃদ্রিক মৎস্যসম্পদ ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও রক্ষায় পর্যটন নগরী কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন দরিয়ানগর এলাকায় আউটরিচ ক্যাম্পাস তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এটিই বাংলাদেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আউটরিচ ক্যাম্পাস। মূলত উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য, সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও রক্ষার উদ্দেশ্যে এই কোস্টাল বায়োডাইভার্সিটি, মেরিন ফিশারিজ অ্যান্ড ওলাইল্ড লাইফ রিসার্চ সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে।

রিসার্চ অ্যান্ড ফার্ম বেইজড ক্যাম্পাস

প্রায় ১০ একর জায়গায় হাটহাজারীতে পৃথক ক্যাম্পাস গড়ে তুলছে ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়। এই ক্যাম্পাসের পাশেই সরকারি ডেইরি ফার্ম অবস্থিত। এখানে শিক্ষার্থী এবং গবেষকরা হাতে-কলমে জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নতুন দুটি অনুষদ ও একটি ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির। দুটি অনুষদের একটি হবে ফ্যাকাল্টি অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আরেকটি হবে ফ্যাকাল্টি অব এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স।

ইন্টার্ন ও স্নাতকোত্তর ভেটেরিনারি ডাক্তারদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকার পূর্বাচলে গড়ে তুলেছে টিচিং অ্যান্ড ট্রেনিং পেট হাসপাতাল রিসার্চ সেন্টার। উন্নত চিকিৎসা সেবাও দেওয়া হচ্ছে এই পেট হাসপাতালে।