প্রবন্ধ


স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী
Mehanaj Afrin
ID: 17/28, Reg.No: 01784 Faculty of Fisheries Chattogram Veterinay and Animal Sciences University
ভূমিকা
২৬ মার্চ ১৯৭১ পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি দেশের নামের অন্তর্ভুক্তি ঘটে। এ দিনের নবীন সূর্যোদয়ের মধ্যে দিয়ে আমাদের জাতীয় জীবনে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। এ স্বাধীনতা দিবসের আনন্দোজ্জ্বল মুহূর্তের মধ্যে প্রথমেই যে কথা মনে পড়ে, তা হলো এ দেশের অসংখ্য দেশপ্রেমিক শহীদের আত্মদান। আজ বাঙালি স্বাধীন। ব্রিটিশরা নেই, পাকিস্তানিরা নেই, জমিদাররা নেই। প্রতিবছর গৌরবময় এ দিনটি পালন করতে গিয়ে আমাদের কর্তব্য হয়ে উঠে স্বাধীনতার স্বপ্ন ও সাধ আমরা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছি, জাতীয় জীবনে আমাদের অর্জন কতটুকু আর বিশ্বসভায় আমাদের অবস্থান কোথায় সেসব মিলিয়ে দেখা। এদিক থেকে স্বাধীনতার ৫০ বছর দিনটি আমাদের আত্মসমালোচনার দিন, হিসাব মেলাবার দিন ও আত্মজিজ্ঞাসার দিন।

বিজয়ের ৫০ বছর পরের বাংলাদেশ
বাংলাদেশের মতো নতুন দেশের যাত্রা ছিল নানাভাবে কণ্টকাকুল ও বিপৎসংকুল। একদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ। ভৌত-অবকাঠামো, রাস্তাঘাট- ব্রিজ যানবাহন, বিদ্যুৎ, টেলিফোন, প্রায় সবকিছুই বিনষ্ট বিধ্বস্ত। প্রশাসন অসংগঠিত ও অনুপস্থিত। বৈদেশিক মুদ্রার শূন্য ভান্ডার ও ভারসাম্যহীন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। নিঃস্ব, সহায়-সম্বলহীন কোটি শরণার্থীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন চ্যালেঞ্জ। বিশ্বমন্দা ও নানা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। বন্যা, খাদ্যাভাব, সামাজিক অস্থিরতা ও আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি।

স্বাধীনতাযুদ্ধে একসঙ্গে যাঁরা যুদ্ধ করলেন তাঁদের মধ্যে ঘোরতর বিভক্তি। চরমতম রাজনৈতিক অস্থিরতা, রক্তারক্তি গুম ও খুন। কলকারখানায় লুটপাট ও আগুন। মুনাফাখোর, মজুতদার ও চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম এবং ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অবিশ্বাস্য অগ্নিমূল্য। অবশেষে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড। হতভম্ব জাতি। স্বাধীনতার প্রথম ২-৩টি বছর একটি দুর্বিষহ দুঃসময় যার সঠিক ও বাস্তব মূল্যায়ন কখনো নির্মোহভাবে হয়নি।

আজ বাংলাদেশ ও স্বাধীন জাতীয় রাষ্ট্র হিসেবে ৫০ বছর পূর্তির দ্বারপ্রান্তে। তাই পেছন ফিরে তাকালে আমাদের স্বস্তির অনেক কারণ পাওয়া যায়। অন্তত এ ৫০ বছরে আমাদের অর্জন খুব একটা কম নয়, এক কথায় অসামান্য। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মের সময় পৃথিবীর অন্যতম দারিদ্রপীড়িত দেশ ছিলো। মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ মানুষই ছিল দারিদ্র্যসীমার নিচে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে আজ তা নেমে এসেছে ২০ শতাংশের নীচে যা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে নির্দেশ করে। কিন্তু দেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভ করলেও থেকে গেছে প্রকট ধন বৈষম্য। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দেশের অগ্রগতি জানতে হলে বিশ্লেষণ প্রয়োজন ১৯৭১ থেকে ২০২০ পর্যন্ত সামষ্টিক ও ব্যাষ্টিক অর্থনীতি সম্পর্কে দেশের অবস্থান। ১৯৭০ সালে স্বাধীনতা পূর্ব সময়ে বাংলাদেশের জিডিপি ছিল শুধু ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু ২০২০ সালে এসে অনুমিত জিডিপি ৮৬০.৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১৯৭০-এ মাথাপিছু গড় আয় ছিল ১৪০ ডলার, ২০১৮-২০১৯ এ বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১৯০৯ ডলার এবং ২০২০-এ তা ২০৬৪-এ উন্নীত হয়। ১৯৭২-১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি, ২০১৯-২০২০ এ ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি এবং ২০২০-২০২১ সালের বাজেট ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। ১৯৭২-১৯৭৩ সালে উন্নয়ন বাজেটের আকার ছিল ৫০১ কোটি টাকা যা ২০২০-২১ সালে হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। এসব কিছুর প্রতিফলন দেখা যায় বিদ্যুতায়ন, গ্রামীণ সড়কের ঘনত্ব, শিল্পায়ন, গৃহায়ণ, নগরায়ণ, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, দারিদ্র্য বিমোচন প্রভৃতি ক্ষেত্রে। সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও আমাদের ৫০ বছরের অগ্রগতি স্বস্তিদায়ক। যেমন সার্বিক সাধারণ শিক্ষা, স্বাস্থ্য তথা শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু, গড় আয়ু, ইপিআই নারীর ক্ষমতায়ন, জন্ম ও মৃত্যুহার হ্রাস ইত্যাদিতে অগ্রগতির উল্লেখ করা যেতে পারে।

অন্যদিকে দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছে গার্মেন্টস শিল্প। সত্তরের দশকের শেষের দিকে রপ্তানিমুখী খাত হিসেবে এই শিল্পের উন্নয়ন ঘটতে থাকে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী শিল্পখাত। ২০১৯ সালেও তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। জেনেভায় এক সম্মেলনে একথা জানিয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)। ১৯৮১-৮২ সালে মোট রপ্তানি আয়ে এই শিল্প খাতের অবদান ছিল মাত্র ১১ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশ আসে গার্মেন্টস শিল্প থেকে। সময়ের পরিক্রমায় গার্মেন্টস শিল্প সম্প্রসারণ হতে থাকে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে গার্মেন্টস শিল্প বিস্ময়কর প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বর্তমানে গার্মেন্টস শিল্পে প্রায় ৪০.৪৫ লাখ শ্রমিক কর্মরত। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলছে। ২০১৯ সালে ১৮ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়ে ছিলেন প্রবাসীরা যা আগের বছরে ছিলো ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালের রেমিট্যান্স আসে প্রায় ১৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার যা বিগত বছর গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আমাদের দেশের প্রবৃদ্ধির অন্যতম নিয়ামক হিসেবে বিবেচনা করা হয় প্রবাসীদের পাঠানো এই রেমিট্যান্সকে যা প্রত্যাশার শীর্ষে।

এতো প্রবৃদ্ধিতে সম্ভব হয়েছে স্বপ্নের পদ্মাসেতুর বাস্তবে রুপদান। স্বপ্নের পদ্মাসেতু এখন দৃশ্যমান। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে পদ্মাসেতুর এই দৃশ্যমানতা দেশের অগ্রগতি হিসবে বিশ্বের দরবারে সূচনা করলো নতুন অধ্যায়ের। পদ্মাসেতুর ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের। উপকৃত হবে প্রায় ২১টি জেলার মানুষ। তৈরী হবে ভারি শিল্প কারখানা। এতে বাড়বে কর্মসংস্থান যা অনেকের বেকারত্ব ঘুচাতে সাহায্য করবে।

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে স্ব-অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রশস্তকরণসহ মহাসড়ক সংস্কার, মেট্রোরেল ট্যানেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট রূপপুর পারমাণবিক প্ল্যান্ট, ওভার ব্রিজ, ফ্লাইওভার অসংখ্য ব্রিজ কালভার্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভবন, রেল উন্নয়ন, নৌপথ উদ্ধার, নতুন রাস্তা নির্মাণ ও পুরানো রাস্তা সংস্কার, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষমতা লাভ করলেও জীবন যাত্রার মান উন্নত হয়নি সাধারণ জনগণের। পূরণ হয়নি মৌলিক অধিকার গুলো। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা দেশের উন্নয়নের সাথে সাথে প্রতিষ্ঠিত হোক সুশাসন, গনতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা। যাতে সাধারন নাগরিক মাথা উঁচু করে বলতে পারে স্বাধীনতা অর্জনের মৌলিক প্রত্যাশা পূরণে আমাদের বিসর্জন যেন অব্যর্থ।

সাফ গেমসে সোনা জয় করে আনছেন আমাদের ক্রীড়াবিদরা। তাহমিনা আনাম-মনিকা আলীর বই বিশ্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে, ড. মাকসুদুল আলম উদ্ভাবন করেছেন পাটের জিনোম, ড. জাহিদ হাসান হিগস বোসন কলা আবিষ্কারে রেখেছেন অসামান্য অবদান।। জাওয়াদ করিম ইউটিউব প্রতিষ্ঠা করেছেন, আয়মান সাদিক ১০ মিনিট স্কুল নাম অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছেন যা সত্যিই প্রশংসনীয়। সালমান খান প্রতিষ্ঠা করেছেন খান একাডেমি। তাদের অবদানের ফলে উপকৃত হচ্ছে বিশ্ববাসী। অবদানের ফলে উপকৃত হচ্ছে বিশ্ববাসী।

মহান স্বাধীনতার ৫০ বর্ষপূর্তি: অর্ধশত বছরে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ঘটনা ও অর্জন

১৫ মার্চ ১৯৭২: বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন।
৭ মার্চ ১৯৭৩: স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত।
৩ মার্চ ১৯৭৬: বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবর্তন।
২৩ মার্চ ১৯৭৯: বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর প্রতিষ্ঠিত।
২২ মার্চ ১৯৯৬: ঢাকার সেগুনবাগিচার বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক দেশের প্রথম জাদুঘর উদ্বোধন। বর্তমানে জাদুঘরটির অবস্থান আগারগাঁওয়ে।
৪ মার্চ ১৯৯৭: গ্রামীণ আদালত প্রতিষ্ঠা।
২৬ মার্চ ১৯৯৭: বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল অপারেটর হিসেবে গ্রামীনফোনের যাত্রা শুরু। ১৭ মার্চ ১৯৯৮ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে প্রথমবারের মতো পালিত হয় জাতীয় শিশু দিবস।
১ মার্চ ২০০০: জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি আনোয়ারুল করিম চৌধুরী জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
২০ মার্চ ২০০০: প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে আসেন বিল ক্লিনটন।
১৩ মার্চ ২০০১: তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনান।
১ মার্চ ২০০২: সারা দেশে পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন বিপণন ও ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়।
১৩ মার্চ ২০০৫: প্রকাশ্য স্থানে এবং উড়োজাহাজ ও যানবাহনে ধূমপান নিষিদ্ধ করে জাতীয় সংসদে বিল পাস।
৬ মার্চ ২০০৬: দেশের সপ্তম সরকারি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ই পি জেড) হিসেবে উদ্বোধন করা হয় আদমজী ই পি জেড।
২ মার্চ ২০০৭: উপমহাদেশে প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে শুরু হয় বি-লীগ নামের পেশাদার ফুটবল লীগ।
১৬ মার্চ ২০১০: দেশে প্রথমবারের মতো ইন্টারনেট টেলিফোন সেবা চালু।
৫ মার্চ ২০১১: খুলনা শিপইয়ার্ডে দেশে প্রথমবারের মতো যুদ্ধজাহাজ তৈরির নির্মাণ কাজ উদ্বোধন।
১৪ মার্চ ২০১২: ঢাকায় রাজস্ব সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে "বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি প্রথা"র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
১০ মার্চ ২০১৪: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট বা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা হয়।
২৭ মার্চ ২০১৪: বাংলাদেশসহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ১১ টি দেশকে পোলিওমুক্ত ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
৯ মার্চ ২০১৫: একাদশ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ইংল্যান্ডকে ১৫ রানের ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো নকআউট পর্বে উত্তীর্ণ হয়।
২১ মার্চ ২০১৫: সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতে যুক্ত করা হয় নিউমোনিয়ার টিকা ও পোলিও ইনজেকশন।
২৫ মার্চ ২০১৫: মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় নির্মিত ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থিত দেশের প্রথম ও একমাত্র ভূগর্ভস্থ জাদুঘর স্বাধীনতা জাদুঘর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এর স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী ও মেরিনা তাবাসসুম।

সীমান্তরক্ষী বাহিনী গঠন: সীমান্ত রক্ষার অতন্ত্র প্রহরী হিসেবে ৩ মার্চ ১৯৭২ গঠন করা হয় বাংলাদেশ রাইফেলস। ২৯ জুন ১৭৯৫ থেকে প্রতিষ্ঠাকালীন এর নাম ছিল রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ান। ২৩ জানুয়ারি ২০১১ থেকে এ বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ নামে তার কার্যক্রম চালাচ্ছে।

উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় বাংলাদেশ: ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। সেই থেকে দেশটি নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে জাতিসংঘের বেঁধে দেয়া তিনটি শর্ত বা সূচক পূরণে তিন দফায় ব্যর্থ হলেও ২০১৮ সালে চূড়ান্তভাবে সফলতা অর্জন করে। এল.ডি.সি থেকে উত্তরণের জন্য তিনটি সূচকের যে কোনো দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে জাতিসংঘের তিনটি শর্তই পূরণ করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। ১২-১৬ মার্চ ২০১৮ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের আওতাধীন উন্নয়ন নীতি কমিটির ২০ তম ত্রিবার্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সকল মানদণ্ড পূরণের স্বীকৃতি পায়।

মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা জয়: বাংলাদেশ মিয়ানমার সমুদ্রসীমা বিরোধ মামলার রায় দেওয়া হয় ১৪ মার্চ ২০১২। জার্মানির হামবুর্গে অবস্থিত সমুদ্র আইনবিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল এ রায় দেয়। সমুদ্রসীমা সমস্যা নিরসনে মিয়ানমারের দাবি ন্যায্যতা পদ্ধতি কে বিচার বিশ্লেষণ করে আদালত ন্যায্যতা পদ্ধতি অনুযায়ী রায় ঘোষণা করেন। ফলে বাংলাদেশ তার সমুদ্রসীমানা দাবিতে জয়ী হয়। এ রায়ের মাধ্যমে তেল গ্যাস সমৃদ্ধ বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমুদ্রসীমা চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হয়েছে।

গিনেস বুকে সোনার বাংলা: বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তায় ২৬ মার্চ ২০১৪ দেশের ৪৩ তম মহান স্বাধীনতা দিবসে 'লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা শিরোনামে এক সাথে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার বিশ্বরেকর্ড গড়ার আয়োজন করে। ঐদিন ঢাকার শেরে বাংলা নগরে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে যান্ত্রিক গণনা অনুসারে, লাখ কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে সমবেত হয়েছিলেন ২,৫৩,৬৮১ জন। ঐ ঘটনার ১৪ দিন পর অর্থাৎ ৯ এপ্রিল ২০১৪ গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ওয়েবসাইট একসাথে সবচেয়ে বেশি মানুষের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার বিশ্বরেকর্ড-এ বাংলাদেশের নাম ঘোষণা করা হয়।

ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকাশ: জুন ২০১৯ পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবা নিতে সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ১৮ হাজার ১৭৫ কি. মি. অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপন, ২ হাজার ৪ টি ইউনিয়নে ওয়াইফাই রাউটার (Wifi Router) স্থাপন এবং ১ হাজার ৪৮৩ টি ইউনিয়নকে নেটওয়ার্ক মনিটরিং সিস্টেমে সংযুক্ত করা হয়েছে। আমরা এখন ৪ জি ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছি, সামনে আসছে ৫ জি। তৈরী হয়েছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন। কিছুদিন পর আমরা ঘরে বসেই ভোট দিতে পারবো।
ই-কমার্স ও ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকাশের ফলে আইটি সেক্টরে মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়েছে ও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। ২০১০ সাল থেকে সব শ্রেণি ও পেশার মানুষকে ই-সেবার সঙ্গে পরিচিতকণের লক্ষ্যে প্রতিবছর ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।

কৃষি উন্নয়ন: কৃষিতে প্রযুক্তির ছোঁয়া: স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। ধানের উৎপাদন তিনগুণেরও বেশি, গম দ্বিগুণ, সবজি পাঁচগুণ এবং ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে প্রায় দশগুন। শেখ হাসিনা সরকারের যুগোপযোগী পরিকল্পনার পাশাপাশি পরিশ্রমী কৃষক, মেধাবী কৃষি বিজ্ঞানী ও সম্প্রসারণবিদদের যৌথ প্রয়াস ও কৃষিতে লাগসই প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এ সাফল্য এসেছে। এভাবেই প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ।

যোগাযোগ ব্যবস্থা: স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে আমাদের দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে বিপুল পরিবর্তন। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কথা মাথায় রেখে শেখ হাসিনা সরকার সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়নে বিভিন্ন যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে, যার সুফল আমরা ইতোমধ্যেই পেতে শুরু করেছি। মিরপুর ফ্লাইওভার হাতিরঝিল প্রকল্প, হানিফ ফ্লাইওভার, কুড়িল ফ্লাইওভার, বনানী ফ্লাইওভার, ইউলুপ, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার, চার লেন বিশিষ্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, বিআরটি প্রকল্প এলিভেটেড রিং রোড প্রকল্প প্রভৃতি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নগরীকে যানজট মুক্ত করার পাশাপাশি সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করছে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১: বাংলাদেশের মালিকানাধীন প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বাংলাদেশের প্রথম ভূস্থির (Gestationary) যোগাযোগ ও সম্প্রচার উপগ্রহ। এর মধ্যে দিয়ে ৫ তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপকারী দেশের তালিকায় যুক্ত হয় বাংলাদেশ। এটি ১১ই মে ২০১৮ যুক্তরাষ্টের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপ করা হয়।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ
শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিভিন্ন খাদ্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান আজ ঈর্ষণীয়। যেমন, বিশ্বে ধান উৎপাদনে ৩য়, প্রাকৃতিক উৎস হতে মাছ উৎপাদনে ৩য়, সবজি উৎপাদনে ৩য়, আলু উৎপাদনে ৭ম, চা উৎপাদনে ৯ম এবং পাট উৎপাদনে ২য়।

আগামীদের প্রত্যাশা
আমরা চাই এমন এক নিরাপদ বাংলাদেশ যেখানে দিন রাতে অবাধে চলাফেরার ভয় নেই, যেখানে যে কোনো সময় নিখোঁজ হয়ে যাবার উৎকণ্ঠা তাড়া করে বেড়ায় না, যেখানে গাড়ি চাপায় বা আগুনে পুড়ে মৃত্যুর হাত থেকে মুক্ত থাকে আমাদের জীবন।
সে বাংলাদেশ এমন এক বাংলাদেশ যেখানে চাকরির খোঁজে দেশের যুবককে অসহায়ভাবে ঘুরতে হবে না, যেখানে চিকিৎসার পেছনে ব্যয় হবেনা কাড়ি কাড়ি টাকা, যেখানে শিক্ষা হবে প্রকৃত মানুষ গড়ার হাতিয়ার, জনবল হবে সৎ ও কর্মঠ, নীতিবান ও একাগ্রচিত্ত যারা দেশকে মুক্ত রাখবে দুর্নাতির কলুষতা থেকে।
নগরগুলো হবে সবুজ আর পরিকল্পিত, হবে যানজটমুক্ত, যার নদীগুলিতে থাকবেনা দূষণের চিহ্ন।
সেই বাংলাদেশে থাকবে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ। তা হবে রাজনৈতিক সহিংসতা থেকে মুক্ত। সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত বিভিন্ন সম্প্রদায় থাকবে। সেই বাংলাদেশে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য থাকবে না। থাকবে বিশ্বায়নের চেতনা কিন্তু অবসান ঘটৰে স্বদেশে সংস্কৃতির বিকৃতি।

শিক্ষা
জাতীয় জীবনে শিক্ষার সুফল দ্রুত পৌছে দিতে শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন করা, বৈশ্বিকভাবে বর্তমানের গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটানো, মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিকল্পনা করে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো, সংবিধান অনুযায়ী বহুধারার সব শিক্ষা ব্যবস্থাকে দেশপ্রেমমূলক বাঙালি জাতীয়তাবাদে সম্পন্ন একই ধারার শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন, যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ, জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে কর্মদক্ষতা অর্জন ও সামাজিক উৎপাদনে অংশগ্রহণ করার মতো ক্ষমতা লাভের সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।

চিকিৎসা
করোনা ভাইরাসের প্রকোপে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের বেহাল দশা উন্মোচিত হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতের এই অনিয়মের মহোৎসব তৃণমূল পর্যন্ত পৌছিয়ে গেছে, যা কঠোর হস্তে দমন না করলে বন্ধ করা সম্ভব নয়।

নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ
সরকারের কাছে প্রত্যাশা, আমাদের দেশের খাবার বিক্রি করার ধরনে পরিবর্তন আনবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী যেন সব খাবার তাদের স্বল্প মূল্যের মধ্যে সংগ্রহ করতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। খাদ্য মজুদ করা থেকে বিরত থাকতে হবে সবার। ফ্রিজে মাছ, মাংস জমিয়ে না রেখে সবাই যাতে স্বল্প দামে অল্প অল্প পায় সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। তবেই এদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ।

নারীর ক্ষমতায়ন ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা
বাঙালি জাতি নারীকে না পারে সম্মান দিতে, না পারে সমান অধিকার দিতে। নারীর প্রতি ধর্ষণ, নির্যাতন, হত্যা এসব রোজই চলছে। নারীকে এ জাতি ভোগ্যপণ্য করে তুলছে। বাস কিংবা সিএনজি কোথাও নারী নিরাপদ নয়। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা সেখানেও নারী আজ অনিরাপদ। আশা-রাখছি একুশ সালে নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা কিছুটা সহনশীল হবে।

বেকারত্ব দূরীকরণ
বাংলাদেশে বেকারত্ব বর্তমানে একটি জাতীয় সমস্যা। এই সমস্যা সমাধান অতীব জরুরি। নিকট অতীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেছেন, বেকারত্ব দূর করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। এটা যদি বাস্তবায়ন হয়, তবে এদেশের লাখ লাখ বেকার তরুণের ভাগ্য খুলবে। ফিরবে হাসির জোয়ার। স্বাধীনতার ৫০ বছরের এই সালটি যেন বেকারদের জন্য আশীর্বাদ হয়, সেই কামনা করছি।

দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন
বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের দুর্নীতি ছিল দৃশ্যমান। এই দুর্নীতি ছিল ছোট থেকে বড় বড় সেক্টরেও। করোনার সময় মাস্ক, পিপিই নিয়ে ছিল দুর্নীতি, ছিল করোনার সার্টিফিকেট নিয়ে দুর্নীতি, পাপিয়া-সম্রাটদের দুর্নীতির গল্প। শুধু তাই নয়, বালিশ কাণ্ড, পর্দা কাণ্ডও এদেশের মানুষ ভুলতে পারেনি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই দুর্নীতির উৎসব থামবে কবে? নতুন বছরে সরকার যেন এই বিষয়ে আরও নজর দেয়, সেই প্রত্যাশা সবার।

পররাষ্ট্রনীতি
পররাষ্ট্রনীতিতে আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে পেরেছি পৃথিবীর প্রত্যেক রাষ্ট্রের সাথে। প্রতিবেশী দেশসমূহের সাথে এ সম্পর্ক আরো মজবুত। আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সমুদ্র বিজয়, ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে ছিটমহল বিনিময় পররাষ্ট্রনীতির সফলতার উদাহরণ। কিন্তু তিস্তার পানি বণ্টন, সীমান্তে নির্বিচারে নির্ভীক হত্যাকান্ড বাণিজ্য ঘাটতি দূরীকরণ, সংস্কৃতি বিনিময়ে সমতা আনয়ন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের আরো শক্ত পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন।

জনসংখ্যা সমস্যা মোকাবেলা
জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে হবে, অতিরিক্ত জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ নিরুৎসাহ ও বন্ধ করতে হবে।

কম সুদের ব্যবস্থা
অধিকাংশ দরিদ্র পল্লীবাসী ভূমিহীন। ফলে অন্ন যেমন জোটে না তেমনি তাদের অনেকে সরকারি ঋণও পায় না। ঋণ পাওয়া থেকে বঞ্চিতদের জন্যে স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।

স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের করণীয়
প্রিয় মাতৃভূমি ৫০ বছরে পদার্পন করল, এ সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পথ চলে অর্জন কম নয়। তবে শোষণ ও বৈষম্যহীন সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথে আরো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের জয়লাভের বড়ো হাতিয়ার ছিল দেশপ্রেম। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ মাতিয়ে শ্রেষ্ঠ সন্তানরা পাকিস্তানী বাহিনীকে পরাজিত করে লাল-সবুজ পতাকার জন্ম দিয়েছেন। দেশপ্রেম, আত্মবিশ্বাস ও আত্মশক্তিতে জেগে ওঠার এ এক বিরল ইতিহাস। কিন্তু স্বাধীনতার পর ব্যক্তিস্বার্থের প্রাধান্যে সেই ঐক্য ও দেশপ্রেম অনেকটাই ম্রিয়মান। নৈতিক চেতনার উন্নতিতে আমাদের মনোযোগ কম। ফলে বেড়েছে বঞ্চনা, অন্যায় ও বৈষম্য। অবকাঠামোগত উন্নতি হলো তা ঠিক, কিন্তু মানুষের মানবিক অবস্থা নাজুক, বেড়েছে নৈতিক অবক্ষয়। সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য আমাদের প্রয়োজন উন্নত ও উচ্চতর মানবসম্পদ ও উৎপাদনশীল নাগরিক গঠন। দেশপ্রেম জাগ্রত হওয়ার জন্য আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানতে হবে। দেশে যে হারে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী অপতৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। গড়ে তুলতে হবে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ। এর জন্য নৈতিকতা চর্চা বাড়াতে হবে, মন ও মননের বিকাশ ঘটাতে হবে। মেধার পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ও প্রয়োগ করতে হবে।

উপসংহার
বাংলাদেশ একটি স্বপ্নের নাম। বহু মানুষের স্বপ্ন-সাধের দেশ এই বাংলাদেশ। এদেশে যেসব সমস্যা বিরাজমান সেগুলোর সমাধান সকলে মিলে করতে হবে। এদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব রক্ষা আমাদের সকলের দায়িত্ব। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে আমাদের পথ হবে বিভেদ নয়, ঐক্যের মাধ্যমে দেশকে গড়ে তোলা। তাই আসুন আমরা প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে এই দেশ ও এই দেশের মানুষের জন্য কাজ করি। একদিন হয়তো সব স্বপ্ন সত্যি হবে। যেমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম আমরা তেমনটাই হয়তো পাবো। তাই স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমাদের প্রার্থনা, আমরা যেন মানুষ হয়ে উঠি। বাংলাদেশ হয়ে উঠুক একটি যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানমনস্ক, প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক বাংলাদেশ। তবেই তো আমাদের স্বাধীনতার উদ্দেশ্য সফল ও অর্থবহ হবে।

বিঃ দ্রঃ উক্ত লেখার সম্পূর্ণ দায়ভার লেখকের