Students

  Teachers

  Staffs

 

করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ এবং করণীয়





সমকাল
আজকের পত্রিকা
করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ এবং করণীয়
প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২১
উপাচার্য, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়

কভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা, স্বাদ ও ঘ্রাণ হারানো, দুর্বলতা, ডায়রিয়াসহ নানাবিধ উপসর্গ দেখা যায়। ক্ষেত্র বিশেষে কোনো উপসর্গ পরিলক্ষিত না হলেও অনেক রোগীকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে সেবা প্রদান করতে হয়। কভিড-১৯ নির্ণয়ের জন্য বিশ্বব্যাপী স্ট্যান্ডার্ড মলিকুলার পদ্ধতি হলো রিয়েল টাইম রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন-পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (আরটি-পিসিআর)। এই পরীক্ষা করতে অনেকগুলো ধাপ পর্যায়ক্রমে অনুসরণ করতে হয়।
প্রাথমিক পর্যায়ে জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা, স্বাদ ও ঘ্রাণ হারানো, দুর্বলতা, ডায়রিয়াসহ নানাবিধ উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করতে হয়। যেহেতু করোনাভাইরাস দ্বারা ব্যক্তির শ্বসনতন্ত্র শুরুতে আক্রান্ত হয়, তাই করোনার উপসর্গযুক্ত ব্যক্তির শ্বাসনালির উপরিভাগ অর্থাৎ ন্যাসোফ্যারিঙ্গস থেকে সোয়াব (নমুনা) সংগ্রহ করা হয়। পারিপার্শ্বিক প্রভাবে ভাইরাসের যাতে কোনোরূপ পরিবর্তন সাধিত না হয়, সেই জন্য সংগৃহীত ন্যাসোফ্যারিঞ্জিয়াল সোয়াবকে বিশেষ ধরনের ভাইরোলজিক্যাল ট্রান্সপোর্ট মিডিয়ামে (ভিটিএম) রেখে নির্দিষ্ট লেবেল করে নিতে হয়, যাতে পরে রোগীর নমুনা সঠিকভাবে পরীক্ষা করে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা যায়।
সাধারণ তাপমাত্রায় ভাইরাস দীর্ঘস্থায়ী হয় না বিধায় আরটিপিসিআর পরীক্ষার গুণগত মান বজায় রাখতে সঠিকভাবে নমুনা সংরক্ষণ ও পরিবহন প্রয়োজন। স্বল্প সময়ের জন্য নমুনা পরিবহনের ক্ষেত্রে আইস বক্সে জেল বা বরফের সাহায্যে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পরীক্ষাগারে নমুনা সংরক্ষণের জন্য -৮০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রার ফ্রিজার ব্যবহার করা হয়।
নভেল করোনাভাইরাসের বাইরের আবরণকে এনভেলাপ বলা হয়। ভাইরাসের নিওক্লিয়িক অ্যাসিডকে ঘিরে ক্যাপসিড নামের আরেকটি শক্ত আবরণ রয়েছে। নিওক্লিয়িক অ্যাসিডকে ভাইরাস থেকে আলাদা করতে চারপাশের ক্যাপসিডকে ভাঙতে হয়। বিভিন্ন উপায়ে নিওক্লিয়িক অ্যাসিড এক্সট্রাকশন করা যায়। তবে দেশের অধিকাংশ ল্যাবে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বহুল ব্যবহূত এক্সট্রাকশন কিট রিলিজ বাফার ব্যবহূত হচ্ছে। রিলিজ বাফারের কার্যকরী উপাদান হলো গুয়ানিডিয়াম থায়োসায়ানেট, যা এক্সট্রাকশনের সময় আরএনএকে সুরক্ষিত রাখে। এ ছাড়া অন্যান্য যেসব পদ্ধতিতে আরএনএ এক্সট্রাকশন করা যায়, তা অনেক সময়সাপেক্ষ। তাই করোনা মহামারির সময়ে দেশের অধিকাংশ ল্যাবের কার্যক্ষমতা বিবেচনা করে কম সময়ে অধিক সংখ্যক নমুনা পরীক্ষার জন্য বহুল ব্যবহূত লাইসিস বাফার পদ্ধতিই অনুসরণ করা হচ্ছে। কিছু কিছু ল্যাবে অটোমেটিক এক্সট্রাকশন রোবট ব্যবহার করে কলাম কিট পদ্ধতিতে আরএনএ এক্সট্রাকশন করা হচ্ছে, যা ম্যানুয়ালি করা অনেক সময়সাপেক্ষ।

পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) হলো, ইন-ভিট্রো পরিবেশে (জীব শরীরের বাইরে) ডি-ওক্সিরাইবো নিওক্লিয়িক অ্যাসিডের (ডিএনএ) সংখ্যা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া। সাধারণ পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন কেবল ডিএনএ থেকেই করা সম্ভব। নমুনা থেকে যে আরএনএ এক্সট্রাকশন করা হয়, তার মধ্য থেকে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্তকরণের জন্য আরটিপিসিআর করানো হয়। নভেল করোনাভাইরাস হলো, আরএনএ ভাইরাস, যার জিনোম এক সূত্রক। তাই এক সূত্রক এই আরএনএকে রিভার্স ট্রান্সকিপটেজ এনজাইমের উপস্থিতিতে প্রথমে দ্বিসূত্রক ডিএনএ বা কমপ্লিমেন্টারি ডিএনএ (সিডিএনএ) করা হয়। পরে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানের সংমিশ্রণে রিয়েল টাইম পিসিআর থার্মোসাইক্লারে এই বিক্রিয়া সংগঠিত করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে।
রিয়েল টাইম পিসিআর থার্মোসাইক্লার মেশিনের সঙ্গে একটি কম্পিউটার যুক্ত থাকে, যাতে সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরীক্ষার ফলাফল বিশ্নেষণ করা হয়। সাধারণত একবার পরীক্ষার সময় কয়েকটি কন্ট্রোল ব্যবহার করা হয়। যেমন- পজিটিভ কন্ট্রোল, নেগেটিভ কন্ট্রোল, নো রিভার্স ট্রান্সকিপটেজ কন্ট্রোল, নো টেমপ্লেট কন্ট্রোল, নেগেটিভ এক্সট্রাকশন কন্ট্রোল ইত্যাদি। ফলাফল বিশ্নেষণের শুরুতে কন্ট্রোলগুলোর যথার্থতা যাচাই করা হয়। সব কন্ট্রোল থেকে যথাযথ ফলাফল পেলে বাকি নমুনাগুলোর ফলাফল বিশ্নেষণ করে রিপোর্ট করা হয়। সাধারণ পিসিআর থেকে রিয়েল টাইম পিসিআরের বড় সুবিধা হলো, ভাইরাল নিওক্লিয়িক অ্যাসিডের ঘনত্ব নির্ণয় করা, যার মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে নমুনা সংগ্রহের সময় ভাইরাসের পার্র্শ্ব ঘনত্ব সম্পর্কে ধারণা করা যায়।
কভিড-১৯ শনাক্তকরণের জন্য সচরাচর যেই রিয়েল টাইম পিসিআর করা হয়, তাতে কয়েকটি ভাইরাসের আরএনএর কয়েকটি নির্দিষ্ট অংশকে (জিন) লক্ষ্য করে বিক্রিয়া ঘটানো হয়। এই টার্গেট জিনগুলোর মধ্যে ভাইরাল নিওক্লিওপ্রোটিন জিন, ওপেন রিডিং ফ্রেম রেপ্লিপেইজ প্রোটিন, হিউম্যান আরএনেইজ পি জিন উল্লেখযোগ্য। হিউম্যান আরএনেইজ পি জিনের উপস্থিতি প্রমাণ করে নমুনা সঠিকভাবে মানুষের ন্যাসোফ্যারিঙ্গ থেকে সংগৃহীত। নিওক্লিওপ্রোটিন জিন এবং ওপেন রিডিং ফ্রেম রেপিল্গপেইজ প্রোটিনের যে কোনো একটি অথবা উভয় জিনের উপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে রোগীর নমুনায় নভেল করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। কোনো নমুনার সাইকেল থ্রেশহোল্ড (সিটি) ভ্যালু দেখে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ভাইরাসের ঘনত্ব অনুমান করা যায়। তুলনামূলক কম সিটি ভ্যালু রোগীর শরীরে ভাইরাসের অধিক ঘনত্ব নির্দেশ করে, বিপরীতভাবে বেশি সিটি ভ্যালু ভাইরাসের কম ঘনত্ব নির্দেশ করে। তবে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তা রোগীর উপসর্গের সঙ্গে নাও মিলতে পারে। রিয়েল টাইম পিসিআর সিটি ভ্যালুর ওপর ভিত্তি করে রোগীর প্রতি কিছু নির্দেশনা প্রদান করা যায়।
যেসব রোগীর রিয়েল টাইম পিসিআর সিটি ভ্যালু ২৫, তাদের শরীরে ভাইরাসের ঘনত্ব অনেক বেশি এবং তাদের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনাও অনেক বেশি। তাই এই ক্ষেত্রে তাদের আইসোলেশনে থাকা একান্ত প্রয়োজন এবং তাদের সংস্পর্শে যারা ছিল, তাদেরও কোয়ারেন্টাইনে থাকা উচিত। একই সঙ্গে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে।